মাসুদ রানা, মেহেরপুর।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেহেরপুর জেলায় এবার লিচু চাষীরা ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অনাবৃষ্টি খরা ও কাল বৈশাখী ঝড়ের কারনে গাছের লিচু শুকিয়ে ফেটে ও ঝড়ে যাচ্ছে। বাজার দর ভাল থাকলেও খরিদ্দার পাচ্ছে না চাষীরা। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
আম ও লিচুর জেলা মেহেরপুর। আম-কাঁঠালের পাশাপাশি মেহেরপুরের লিচু সুস্বাদু। চাহিদাও ভালো। ভৌগলিক কারণে মেহেরপুরের লিচু অন্য জেলার আগেই বাজারজাত করা যায়। দাম ভালো পাবার কারণে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু চাষ।কিন্তু এ বছরে প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে লিচু চাষীরা আছেন বিপাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে এখন লোকসানের মুখে লিচু ব্যাবসায়ী ও চাষীরা।
সদর সহ ৩ উপজেলায় রয়েছে বাগান। ধরেছে বোম্বাই, চায়না-থ্রিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু। এর মধ্যে আগেভাগেই নামানো হচ্ছে আটি ও মোজাফ্ফরি জাতের লিচু।
কৃষি বিভাগের হিসেবে মেহেরপুর জেলায় লিচুর বাগান আছে ৬৩০ হেক্টর জমিতে। প্রথম দিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় গাছে লিচুর মুকুল এসেছিল ভাল। কিন্ত তাপদাহের পাশাপাশি ঘনঘন ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে লিচু। এই পরিস্থিতিতে গাছের লিচুতে বিভিন্ন কালো দাগ ধরে ফেটে যাচ্ছে এবং শুকিয়ে গেছে। আবার ঝড়ে ও শিলায় গাছের লিচু পড়ে বিনষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে ঝড়ে অনেক লিচু গাছ ভেংগে পড়ে গেছে। এই সব লিচু ভেঙ্গে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে খরিদ্দার পাচ্ছেনা চাষীরা। লিচু চাষীরা বলছেন গাছের ৫০ভাগ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। যা বিক্রি করে খরচের অর্ধেকটা উঠবে না। গত বছরের তুলনায় অর্ধেকও লিচু আসেনি এবার গাছগুলোতে। বাজারে দাম ভাল থাকলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানের আশংখা তাদের।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ফলের মৌসুমে অনলাইনে ফলের ব্যবসা করি। এতে আমার খরচ মিটিয়ে পরিবারে সাহায্যে করি বলে জানান উদ্যেক্তা ফাহাদ হোসেন রুপম।
ফলের মৌসুমে অনলাইনে ফলের ব্যবসা করি। এতে আমার লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে অন্যান্ন কাজ কারতে পারি। দেশের যুবসমাজ মাদক থেকে মুক্ত রাখতে এধরনের উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের জানান উদ্যেক্তা জহুরুল ইসলাম।
গতবারের তুলনায় এবছর অনেক কম পরিমানে লিচু এসেছে। শুরুর দিকে অনেক মুকুল আসার পরও অতিরিক্ত খরা ও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে লিচুর। এবছরে লিচুতে আমরা লোকসান গুনতে হবে।
সদরের আমঝুপি গ্রামের সাখারত আলী বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লিচু বাগানের চাষ করি। অর্ধশতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। এবছরে যে পরিমান লিচু গাছে মুকুল এসেছিল তাতে লিচু ফলন ভালো হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া ও খর তাপে মুকুল পুড়ে গেছে। সেই অনুপাতে এবার লিচু হয়নি। অসময়ে বৃষ্টি ও প্রচুর রোদ্রের তাপে লিচুর গুটি ঝরে গেছে। এবছরে লিচু চাষে লাভবান হতে পারবো কিনা আশা করতে পারছি না।
লিচু চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমার নিজের ৪ টি লিচুর বাগান আছে। সব বাগান মিলে প্রায় ২০০শত লিচু গাছ আছে। এসকল গাছের পরির্চচা আমি নিজেই করি। আমাদের বন্দর গ্রামে প্রায় ১৫০ বিঘার বেশি লিচু বাগান রয়েছে। এবছরে শিলাবৃষ্টি ও রোদের কারনে লিচুর গুটি টিকাতে পারছি না।
প্রতি বাগানে ২-৩ লক্ষ টাকা করে লোকসান হবে। জেলার বাইরে নিয়েও ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। ১৬শ থেকে ২১ টাকা পর্যন্ত এক ক্রাউন লিচুর দাম। এত বাগানে খরচের দাম ঠিমকত হচ্ছে না।
লিচু গাছে পরিচর্চা কারী ফেরদৌস হোসেন বলেন, এবছরে প্রাকৃতিক আবহাওয়ার কারনে গাছের মুকুল পুড়ে গেছে। যে বাগানগুলোতে লিচুর গুটি এসেছে সেগুলো ঝরে যাচ্ছে। কোন কিটনাশষক দিয়ে গুলি ঠেকাতে পারছি না। এত বাগান মালিক ও ব্যবসায়াীদের লোকসান হবে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন জানান, কৃষি বিভাগের হিসেবে মেহেরপুর জেলায় লিচুর বাগান আছে ৬৩০ হেক্টর জমিতে। প্রথম দিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় গাছে লিচুর মুকুল এসেছিল ভাল। কিন্ত তাপদাহের পাশাপাশি ঘনঘন ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে লিচু। কৃষি বিভাগ চাষীদের এই বিপর্যয় মোকাবেলায় বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। শুধু মেহেরপুর সদরে ৩০০ একর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেহেরপুরে লিচুর ফলন বিপর্যয় দাম নিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চাষীরা
Total Page Visits: 1046 - Today Page Visits: 2