মেহেরপুর প্রতিনিধি। বাণিজ্যিকভাবে মেহেরপুরে চাষ হচ্ছে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ বা গেন্ডারী আবার অনেকে বলে ব্লাক সুগার। বাজারে এ জাতের আখের চাহিদা থাকায় চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন জেলার কৃষকরা । প্রতি বছর আখ চাষ ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। অন্য ফসলের চেয়ে আখ চাষ লাভজনক। প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ২ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা প্রায়।
এধরনের আখ খেতে মিষ্টি, রসালো ও নরম। আখের গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরের রঙ সাদা। বাজারে প্রচলিত আখ থেকে ভিন্ন হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি।
এই আখ লম্বায় বড় হওয়ায় বাঁশের মাচা দিতে হয়। প্রতি পিচ আখ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। মেহেরপুরে আখের চাহিদা মিটিয়ে মাঠ থেকে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী জেলার ক্রেতারা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় ৪০-৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। গাছ লাগানোর পর একটি আখ লম্বায় ১৫-২০ ফুট হয়। আখ ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ, সুতা ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচা না দিলে ঝড় ও বাতাসে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
জেলায় এখন অনেক কৃষক আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রতিটি আখের চারা ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে আখ চাষের জন্য ২৫০০ চারা রোপণ করতে হয়। এখান থেকে প্রায় ৯-১০ হাজার আখ পাওয়া যায়। একটি আখ গাছ থেকে ৯-১১টি আখ পাওয়া যায়। আখ চাষ করতে হয় উঁচু জমিতে। প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হয়। তারপর লম্বা লম্বা সারি করে আখের চারা রোপণ করতে হয়। নিয়মিত আখ ক্ষেত পরিচর্যা করতে হয়। রোগ বালাই তুলনামূলক কম। আখ রোপণের ৭ থেকে ১০ মাস পর বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।
গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের রেজা আন উল বাশার তাপস পেশাগত জীবনে তিনি একজন সাংবাদিক। তিনি এনটিভির মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষি প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছেন তিনি। ৫ বিঘা জমিতে সীডলেস লেবুর চাষ করা করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষি আবাদি হাতে নিয়েছি। দুই বছর আগে ৩ বিঘা ফিলিপাইন ব্লাক সুগার বা কালো আখের চাষ শুরু করি। আখের ফলন ভাল হওয়ায় চাষে আগ্রহ দেখায়। বড় পরিসরে আখ চাষ করার জন্য নিজেই চারা তৈরি করে ৯ বিঘা জমিতে এ মৌসুমে আখ লাগায়। আখ চাষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন করছি।
আখ ক্ষেতের এক জন শ্রমিক বলেন, তাপস ভাইয়ের আখ ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করি। আগাছা পরিষ্কার, পাতা কাটা, সার ও কীটনাশক ছিটায়। দিন হাজিরা ৩০০ টাকা পায়।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকা একজন নতুন চাষি মেহেরপুরে কালো জাতের আখ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে গাংনী ঢেপা গ্রামের তাপসের সাথে যোগাযোগ করি। আমি তার সাথে কালো আখের চারা নিতে এসেছি। এই আখ বাজারে চাহিদা রয়েছে অনেক। আমি এবছর ২ বিঘা জমিতে এই ব্লাক সুগার ফিলিপাইন আখের চারা রোপণ করবো। কারণ আখগুলো অনেক লম্বা ও মোটা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার পাটকেলপোতা গ্রামের সালাহ্উদ্দিন বলেন, আমি পাঁচ বছর দক্ষিণ কোরিয়াতে ছিলাম। দেশে এসে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই বিদেশ থেকে ফিরে দেশে এসে কৃষি মিশ্র প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছি। সুস্বাদু পিয়ারা বাগান, মালটা বাগান, কমলা লেবুর চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, সদর উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ ব্লাক সুগার ফিলিপাইন আখের জাত নাম জেনে অন্য জেলা থেকে আখের চারা নিয়ে রোপণ করে। তিনি প্রথমে প্রায় দুই বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আখ চাষ করি। ফলন, আখের মান ভালো, বাজরে চাহিদা ও লাভজনক। আগামীতে অনেক জমিতে চাষ করবো। আখের চারা নিজের নার্সারিতে তৈরি করে জেলার অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি এখন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা চারা নিয়ে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আখ চাষি সোহান আলি জানান, দুই বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করছি। ভালো লাভবান হয়েছি। আখের চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অন্য কৃষকদের কাছে। আখ চাষ লাভজনক। নতুন উদ্যোক্তারা আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, কৃষকরা নতুন ফসল হিসেবে চাষে আগ্রহী কৃষকেরা। ৫০ প্রায় হেক্টর জমিতে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ হচ্ছে এবছরে। চিবিয়ে খাওয়ার মত একটি আখ। আখ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উঁচু জমিতে এ জাতের আখ চাষ করলে ফলন ভাল হয়। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর থেকে।