softdeft

মেহেরপুরে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সজ্জিত হচ্ছে শহীদ মিনার

মেহেরপুরে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সজ্জিত হচ্ছে শহীদ মিনার

মাসুদ রানা, মেহেরপুর ॥ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃত। সম্প্রতি বাংলা ভাষা ডোমেন নেওয়ার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ডট বাংলা ডোমেন সিয়েরা লিওন, ভারত বাদে আমরা পেয়েছি। বাঙ্গালি হিসাবে আমরা গর্বিত। অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি আমাদের অহংকারের এবং গর্বের। এই গর্বের বহিঃপ্রকাশ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানোর মধ্য দিয়ে। কিন্তু ভাষার জন্য প্রান দিয়ে গত ৭০ বছরেও সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এখনো খুঁজে ফিরতে হয় শহীদ মিনার। দেশে প্রতিটি আন্দোলনের পিছনে থাকে ছাত্র সমাজ। সেই ছাত্র সমাজকে সেইসব আন্দোলনের ইতিহাস ও শদ্ধা জানাতেই নির্মিত হয় শহীদ মিনার। ফেব্রয়ারি মাস আসলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় শহীদ মিনার। সজ্জিত করা হয় বিভিন্ন রং তুলি দিয়ে আলপনা। মেহেরপুর পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ সামসুরজ্জাহা পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা শুরু করা হয়েছে।
মেহেরপুর পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীরে আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য যে স্রোতধারায় আমরা আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক ভাষা দিবস পালন করি। বাঙালির চেতনার প্রতীক, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন। ২১শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ দিবস পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। জাতিসংঘের সেই স্বীকৃতির পর থেকে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষ দিনটি পালন করছে। তিনি আরও বলেন, সেই জন্য ছেলে-মেয়েদের ভাষা শহীদদের প্রতি গুরুত্ব এবং ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিটি স্কুল-কলেজে শহীদ মিনার থাকা উচিত। সেই সাথে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য পূর্ণ ব্যাখ্যা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেবে তারা যেন সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। প্রতিবছরই আমরা পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ মিনার আলোকসজ্জায় সজ্জিত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকি। অমর একুশের দিনে পার্কে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সাথে কবিতা আবৃতিসহ নানা কর্মসুচী গ্রহন করা হয়েছে।


মেহেরপুরে শহীদ মিনারের ইতিহাস, জেলায় কবে কখন প্রথম শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছিল তার কোন সঠিক ইতহাস পাওয়া যায়নি। জেলায় ভাষা সৈনিক হিসেবে দাবী করা দু’জনের একজন নজির বিশ্বাস মারা গেছে এবং যিনি বেঁচে আছেন ইসমাইল হোসেন তিনি অসুস্থতার কারণে কিছুই বলতে পারেননি। তবে তৎকালীন মেহেরপুর সরকারী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মহাকুমা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেদী বিল্লাহ আল মাহমুদ জানান, ১৯৬২ সালে বেসরকারীভাবে মেহেরপুর ডিগ্রি কলেজ যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তার কয়েক বছর পর ১৯৬৬ সালে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম ছোট্র একটি বেদী করে সেখানে শহীদদের শদ্ধা জানানো হতো। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে তিনি সহ আরো কিছু ছাত্র নেতা সেটা সংস্কার করে সেই বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি জমকালোভাবে পালন করা হয়। মেহেরপুর জেলায় মানুষের মধ্যে ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস জাগ্রত হয় মুলত ৬৯ এর গণ অভ্যুথানের পর। এরপর ৬৯ পরবর্তি সময়ে জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত মেহেরপুর সরকারী বালক ও বালিকা বিদ্যালয়।প্রথম দিকে মেহেরপুর সরকারী ডিগ্রি কলেজে সর্বজনীনভাবে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হতো। পরবর্তিতে মেহেরপুর পৌরসভা কর্তৃক পৌর ময়দানে ১৯৭৪ সালে বর্তমান শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে নির্মান করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। প্রথম শহীদ মিনারটি ক্ষমতার হাত বদলে বেশ কয়েকবার নির্মাণশৈলী পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে এই শহীদ মিনারটিই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে সরকারী ও বেসরকারীভাবে শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে নির্মিত শহীদ মিনারে ২১শের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলায় মোট ৫১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ৩টি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১৪টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১টি, সরকারি কলেজ ৪টি, বেসরকারি কলেজ ১২টি, কারীগরী শিক্ষা কেন্দ্র ৬টি, কলেজিয়েট স্কুল ৫টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯৬টি, নন-রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টি এবং মাদ্রাসা ৬০টি। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪৩ টি, মাদ্রাসার মধ্যে ৪টি এবং কলেজের মধ্যে ৬ টিতে শহীদ মিনার আছে। বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। তবে এবছর বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মামানাধীনের কাজ চলছে।

Total Page Visits: 921 - Today Page Visits: 5