softdeft

মেহেরপুর হাসপাতালে মেঝে ও সিঁড়িতে সেবা নিচ্ছে ডায়রিয়ার রোগী

মেহেরপুর হাসপাতালে মেঝে ও সিঁড়িতে সেবা নিচ্ছে ডায়রিয়ার রোগী

মেহেরপুর প্রতিনিধি। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মেহেরপুরেও দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। শয্যা খালি না থাকায় মেঝে ও সিঁড়িতে রেখেই অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা ও মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের বিছানাপত্রের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। আছে দুর্গন্ধও। একেবারে গাদাগাদি করে মেঝেতে শয্যা বিছিয়ে অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে। রোগীর সঙ্গে স্বজনেরাও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অবস্থান করছেন। অনেকে দুই দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন। অবস্থা জটিল হলে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে কয়েক জনকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার মনহরপুর এলাকার বাসিন্দা হাফছা খাতুন বলেন, ‘আজ তিন দিন ধরে আমার চার বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়ে রয়েছি হাসপাতালটিতে। শয্যা না পেয়ে সিঁড়ির ওপরে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার কারণে অনেকটা ভালোর দিকে আমার মেয়ে।
সত্তরোর্ধ্ব রমজান শেখকেও মেঝেতে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাড়ি সদরের হরিরামপুর গ্রামে। তাঁর সঙ্গে আছেন বড় মেয়ে নিগারুন খাতুন। রমজান বলেন, ‘দুই দিন হলো শয্যা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভোগান্তিতে পড়ছেন ডায়রিয়ার রোগীরা।
এখানে ভর্তি রয়েছে। আমার বড় মেয়ে ভর্তি করার এক দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে কারণে সে বাড়ি চলে গেছে। এখন এখানে নার্সরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।”

হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স ফিরোজা বেগম বলেন, গত চার বছরের মধ্যে এত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে দেখা যায়নি। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে গত বছরে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়। এ কারণে হাসপাতাল এলাকায় তিনতলা ডরমিটরিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। ছোট ছোট কক্ষে রোগীদের চিকিৎসা দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে মেঝেতে যাঁরা রয়েছে, তাদের অবস্থা গরমে আরও বেগতিক হয়ে পড়েছে।

একই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স লিপা আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। তাই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। রোগীদের খাবার স্যালাইন, আইভি স্যালাইনসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে গুরুতর রোগীদের কুষ্টিয়ায় পাঠানো হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৩০টি। গত বুধবার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২৩ জন করে রোগী ভর্তি হতে হচ্ছেন। শয্যা-সংকট হলেও হাসপাতালে স্যালাইনের মজুত পর্যাপ্ত থাকার কারণে চিকিৎসা দিতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মখলেছুর রহমান বলেন, হঠাৎ গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে মেহেরপুরে। দৈনিক শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাঁদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে সেখানে ১০ জন নার্সকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে আসবে।

Total Page Visits: 1346 - Today Page Visits: 6