মেহেরপুর জেলা গাংনী উপজেলা থেকে এগারো কিলেমিটারের কম দূরত্বে তেতুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের করমদী গ্রাম থেকে মাত্র কই এক গজের মধ্যেই পুরাতন এ মসজিদটি। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে মসজিদটির অবশিষ্ট অংশটুকু।
চারদিকে ঝোপ ঝাড়, তলাপাতা আর গাছগাছালিতে আড়াল হয়ে আছে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি। বিরাট একটি বটবৃক্ষের ভারে নুয়ে পড়েছে মসজিদের অবকাঠামো। জঙ্গলের ভেতর ভুতুড়ে পরিবেশে থাকা মসজিদটি এখন পরিত্যক্ত। দীর্ঘদিনের অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে মসজিদটি নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথাও নেই।
ঝোঁপঝাঁড় এড়িয়ে একটু ভেতরে গেলে চোখে পড়বে— ইটের গাঁথুনি আর শৈল্পিক কারুকার্যে তৈরি মসজিদটি। সামান্য পরিমাণ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা— এই মসজিদের আয়তন নিয়ে বেশ কৌতূহল রয়েছে। এক গম্বুজ মসজিদবিশিষ্ট মসজিদটিকে অনেকে ‘ জলীলের বটতলা বলে ডেকে থাকেন। মসজিদটি এতই ছোট যে, এখানে ইমামসহ ১৫,২০ জনের বেশি নামাজ পড়া সম্ভব না।
কারুশিল্প খচিত মসজিদের গম্বুজসহ ভেঙে পড়েছে এর অবকাঠামো। মসজিদের গম্বুজ বেয়ে উঠেছে একটি বিরাট বটগাছ। এই বটবৃক্ষের ভরে খসে পড়েছে গাঁথুনি। ভেঙে পড়েছে দক্ষিণের দেয়ালটি। ছোট ছোট ইটের গাঁথুনিতে তৈরি প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদে সময়ের পরিক্রমায় সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। অযত্ন-অবহেলা আর সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় বর্তমানে মসজিদটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানে মসজিদের কোল ঘেঁষে দুইটি কবর রয়েছে।
মসজিদটি দেখতে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় লোকজন আসেন। অনেকেই এ মসজিদ সংরক্ষণে লেখালেখিও করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আকরাম আজীজ জানান, মসজিদের কোথাও ফলক নেই। যা দেখে বোঝা যাবে এটি কত সনে নির্মিত। তবে মসজিদটি কারো মতে ৩০০ বছর থেকে ৫০০ বছরের পুরাতন হবে। এখানকার পূর্বপুরুষদের মতে এই অঞ্চলে এত ছোট মসজিদ আর নেই।
দুইটি প্রবেশ পথ ও মেহরাব রয়েছে। মসজিদটিতে ইমামসহ ১৫,২০ জন নামাজ পড়তে পারতেন। মসজিদটির মিনার, ছাদ বা গম্বুজটি ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে মসজিদটিকে ঘিরে একটি বিরাট বটগাছ বেয়ে উঠেছে।
প্রাচীন এই নিদর্শনটি সংরক্ষণ ও সংস্কারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীরা ।
করমদী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আসকার আলী বলেন, আমরা শুনেছি এটি প্রায় ৩ থেকে ৪’শ বছর আগের মসজিদ। আজ থেকে বহু বছর আগে পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হজ্ব পালন করে এসেছিলেন করমদি গ্রামের হাজী দশারত আলী। গ্রামের মানুষের নামাজ আদায়ের সুব্যবস্হার জন্য ১৮৬৪ কি ১৮৬৫ সালে নির্মান করেছিলেন এই মসজিদ টি। যেটা এখন গোসাইডুবি জলিলের বটতলা মসজিদ নামে পরিচিত।
একই এলাকার কাউসার আলী বলেন, আমার বয়স ষাটের কাছাকাছি। আমি তো জন্মের পর থেকে মসজিদটি ওই ভাবে পরিত্যক্ত দেখে আসছি। ওখানে নামাজ হয় না। আগে তো ওই জঙ্গলে সাপ পোকামাকড় ছিল। সেখানে কেউ আর যায় না। এখন গ্রামে অনেক কইটি নতুন মসজিদ রয়েছে, সেই মসজিদেই নামাজ আদায় করা হয়।
স্থানীয় এস এম তারেক বলেন, আমার বাপদাদারাও বলতে পারেনি এ মসজিদ কত সালে তৈরি তবে ধারনা করা যায় এটা ১৮৬৪ কি ১৮৬৫ সালে নির্মান করেছিলেন হাজী দশারত আলী। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁপ জঙ্গলের ভিতর ওই মসজিদটি দেখে এসেছি। এখন তো আগের মতো জঙ্গল নেই, পোকাকামড়ের ভয় নেই। মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকারি ভাবে যদি কোনো উদ্যোগ নেয়া যায়, তাহলে হয়তো ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে এটার স্মৃতিচিন্থ থাকবে।
এই মসজিদটি সংস্কার করে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে এই মসজিদটিকে যুক্ত করা হলে এখানে আরো মানুষ আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা