softdeft

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ঝুকিতে মেহেরপুর সীমান্তের মানুষ \ আতঙ্কে কাটছে দিন

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ঝুকিতে মেহেরপুর সীমান্তের মানুষ \ আতঙ্কে কাটছে দিন

ফোকাস মেহেরপুর \ বিশে^ সবচাইতে এখন আতঙ্কের নাম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টর রোগী এখন দেখা মিলছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। ভারতীয়রা অবাধে কাটাতার পেরিয়ে কাজ করতে আসছে এপারে তাদের নিজ জমিতে। সংস্পর্শে আসছেন বাংলাদেশীদের সাথে।
মেহেরপুরের ওপারের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার তেহট্টি ফুলবাড়িয়া, বারুইপোতা, খানজিপুর, মোবারকপুর, লালবাজার , কৃষননগর, বেতাই, গোবিন্দপুর, হৃদয়পুর, সাহাপুর, নবীননগর গ্রাম। সীমান্ত সিলগালা অথচ ভারতীয় সীমান্ত নবীনগর গ্রামসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করছেন শতশত ভারতীয় নাগরিক। বিএস.এফ’র কাছে আইডি কার্ড জমা দিয়ে কাজ করতে আসছেন কাটাতারের এপারে থাকা তাদের জমিতে। নোমান্সল্যান্ডে কাজ করছেন বটে সাথে গল্পগুজবে মেতে উঠছেন বাংলাদেশীদের কৃষকদের সাথে। মেহেরপুরে যখন করোনা সংক্রামন বাড়ছে তখন সূযোগ পেলে ভারতীয় কৃষকরা কেউ কেউ ঘুরে আসছেন মেহেরপুরে থাকা স্বজনদের বাড়ি থেকেও।
ভারতীয় করোনার ভ্যারিয়েন্টের ভয় যেন তাদের কাছে উপেক্ষিত। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। অথচ ভারতীয়রাই বর্ননা দিচ্ছেন ভারতে করোনা বিভিশিখাময় মুহুর্তগুলো। আর ঈদের পর থেকেই মেহেরপুরে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তারমধ্যে বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ। ফলে এভাবেই আতঙ্কিত রয়েছে মেহেরপুর জেলার মানুষ।

এদিকে জেলার ১১১ কিলোমিটার সীমান্ততে এমন ৭৬ টি পয়েন্ট রয়েছে। এসকল পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশী সীমান্তে প্রবেশ করে কৃষি কাজের জন্য। কাজ শেষে তারা নিজ ভুখন্ডে ফিরে যায়। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট একরাশ আশঙ্ক দিয়ে যায় জেলার মানুয়ের মনে। এমনাবস্থায় সীমান্তগুলোতে কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সবাই।
সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে ভারতীয় ও বাংলাদেশীদের এমন অবাধ মেলামেশার কারণে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়েপাড়ার আশঙ্কা গ্রামের সচেতন মহলের।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে কঠোর নজরদারি না বাড়ালে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়ে পড়তে পারে সীমান্তবর্তি জেলাগুলোতে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলই এখন বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। এজন্য সীমান্তগুলোতে দরকার কঠোর নজরদারি।
এপারে কৃষি কাজ করতে আসা একজন ভারতীয় নাগরিক বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২শতের বেশী ভারতীয় কৃষকরা বাংলাদেশের এপারে মেহেরপুর সীমান্তে আসছে কৃষি কাজের জন্য। কাটাতার দেওয়ার কারনে আমাদের অনেক জমি এদিকে রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের আসতে হয় চাষাবাদের জন্য।

মেহেরপুর সীমান্তবর্তী একজন কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমরা সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করি । ঐ ইন্ডিয়া এই বাংলাদেশ । একই জমির পাশাপাশি কাজ করতে হলে একটু কথা বার্তা তো বলাই লাগে। কিছু করার নেই। আমরা তো আর মানা করতে পারছি না যে কথা বলেন না। এমন বাস্তবতায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে।
মেহেরপুর সীমান্তবর্তী এলাকার নবীননগর গ্রামের মেহেদী হোসেন বলেন, ইন্ডিয়াতে করোনার মহামারী চললেও আমাদের এই সীমান্তে কোন পরিবর্তন হয়নি। অবাধে চলাচল রয়েছে ওপারের লোকজনের। আগে যেরকম ছিল এখনো সেভাবেই আছে।

সীমান্তবর্তী শালিকা গ্রামবাসী আসলাম আলী জানান, আমরা প্রতিদিন টিভিতে দেখছি ইন্ডিয়াতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে করোনাতে। আমরা সেই ভয়ে আছি। কখন না ভারতের করোনা আমাদের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কিনা। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা সীমান্তবর্তী গ্রামের সাধরন মানুয়ের মাঝে ভারতীয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবো। তাই সীমান্ত এলাকা গুলোতে আরও কঠোর ভাবে দেখার দরকার
মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ জামান জানান, বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারন আতঙ্কে আছি। কখন না ভারতীয় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না পড়ি। আমরা এলাকায় জনসচেতনামুলক প্রচার প্রচারনা করছি কেউ যেন ভারতীয় কৃষকদের সাথে মেলামিশা না করে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার কোভিড-১৯ ইউনিটের ডাঃ শোভন মল্লিক বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় মেহেরপুর লোকজনের অনেকেই আত্মীয়সজন রয়েছে। তারা নিজের মধ্যে যোগাযোগ করেন। সেই সাথে তারকাটার এপারে কৃষি কাজের জন্য আসেন। বর্তমান দেশের এই করোনা কালীন সময়ে এসব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। তা না হয়ে দেশের জন্য খুবই খারাপ অবস্থা হয়ে দাড়াবে।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ নাসির উদ্দীন জানান, জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা সেটি দেখবে আইডিসিআর। তবে মেহেরপুর জেলায় যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সাথে ভারতীয়দের সংস্পর্শ আছে কিনা সেটি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক প্রতিকুলের সাথে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কয়েকদিন আগে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানতে পারে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী হিন্দা গ্রামে একই এলাকায় কিছু ঠান্ড জর দেখা দেয়। তখনই আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ঐ গ্রামে নসুনা সংগ্রহ করি। এতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা জানার চেষ্টা চলছে।
আর মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলছেন, সীমান্তগুলোতে বিজিবির টহল জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে। যাতে করে সীমান্ত এলাকায় ছোট ছোট গেট দিয়ে আমাদের সীমান্তে না আসতে পারে।

বিজিবি-৬ পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান, সীমান্তবর্তী জেলার ডিসি, পুলিশ সুপার , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হয়েছে এধরনের কোন তথ্য থাকলে অবশ্যই আামাদেরকে জানাতে। যদি আমাদের করণীয় থাকে আমরা দেখবো, যদি পুলিশ প্রশাসনের করণীয় থাকে তাহলে তারা দেখবেন। তারপরও আমরা কঠোর ভাবে সীমান্তে নজরদারি করছি।

Total Page Visits: 1055 - Today Page Visits: 1