softdeft

মেহেরপুরের বাঁধাকপি রপ্তানী হচ্ছে বিশ্ব বাজারে

মেহেরপুরের বাঁধাকপি রপ্তানী হচ্ছে বিশ্ব বাজারে

মেহেরপুর প্রতিনিধি \ মেহেরপুরের চাষীদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের পর এবার যাচ্ছে তাইওয়ান। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফার আশায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
মেহেরপুর তিন উপজেলাতে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। দেশের সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে চাষিদের। দেশের বাজারে পরিচিত সবজি চাষ খ্যাত মেহেরপুর জেলার চাষিদের ভাগ্যে বইছে সুবাতাস। তবে নিরাপদ সবজি হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছে গাংনী উপজেলার চাষিদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি। গাংনীর বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে যাচ্ছে। এই রপ্তানীতে সবজি চাষের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কৃষিবিভাগ। আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে নিরাপদ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মেহেরপুর। এ জেলায় সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ হয়। যা বিদেশে বেশি বেশি রপ্তানী করতে পারলে চাষিরা যেমন উপকৃত হবে তেমন আর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। এ লক্ষে কীটনাশক সহনশীল ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করছেন মেহেরপুরের চাষিরা। নিরাপদ সবজি হিসেবে চলতি মৌসুমে ১ হাজার মেট্রিক টন বাঁধাকপি সরবরাহ করা হবে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। গত সপ্তাহ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করছেন রপ্তানীকারকরা। ক্ষেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে রপ্তানী উপযোগী করা হচ্ছে। রপ্তানীকারকদের মাধ্যমে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুক্তিবদ্ধ বেশ কয়েকজন কৃষক। রপ্তানীকারকরা কৃষকের জমি থেকেই নিরাপদ বাঁধাকপি সংগ্রহ করেছেন।

এগ্রো ফ্রেশ নামের একটি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানটি গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় শুধুমাত্র গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ করছেন।
সরেজমিনে গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের কৃষক আজগর আলীর বাঁধাকপির জমিতে গিয়ে জানা যায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় বাঁধাকপি ক্ষেত থেকে সংগ্রহের আগেই নিরাপদ সবজির প্রক্রিয়া করা হয়। কপি কাটার পর সাদা কাগজে জড়িয়ে নেট বস্তায় ভর্তি করা হচ্ছে। এসময় সবজি উৎপাদনকারী কৃষক বলেন, প্রতি বছরেই শীতকালের সবজি চাষে আমাদের লোকসান হয় প্রতিবছর এভাবে সবজি বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে আমরা অতি আনন্দে সবজি চাষ বৃদ্ধি করতে পারবো। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন সবজি গ্রামখ্যাত সাহারবাটির নিরাপদ সবজি চাষি আবুল কাশেমসহ অনেকেই।
এগ্রো ফ্রেশ নামের রপ্তনীকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার রুবেল আহমেদ বলেন, এবছর চুক্তিবদ্ধ ৪৫ জন কৃষকের ৭৫ একর জমি থেকে নিরাপদ উপায়ে চাষ করা হয়েছে বাঁধাকপি। জমিতে চারা রোপণের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানী উপযোগী করা হয়। এ বছর রপ্তানীতে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানী করা হয়েছিলো। এবছর নতুন দেশ হিসেবে তাইওয়ানেও রপ্তানী করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬শ টন বাঁধাকপি রপ্তানী করা হয়েছে। এখনো ৫শ টনের চাহিদা রয়েছে তাই নিবন্ধিত চাষী ছাড়াও অন্যান্য নিরাপদ সবজি চাষির থেকে কপি নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর আরও অনেক বেশি সবজি রপ্তানী করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, কৃষিবিভাগ সব সময়ই নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা। কোনভাবেই যেনো এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের বাজারের চাহিদা পুরন করে উদ্বৃত্ত সবজি রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। নিরাপদ সবজি চাষ বৃদ্ধি পাবে।

Total Page Visits: 1129 - Today Page Visits: 2