softdeft

মেহেরপুরে জামায়াতের সেক্রেটারি হত্যা- জনপ্রশাসন মন্ত্রীসহ ১৯ জনের নামে মামলা

মেহেরপুরে জামায়াতের সেক্রেটারি হত্যা- জনপ্রশাসন মন্ত্রীসহ ১৯ জনের নামে মামলা

মেহেরপুরে জেলা জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেহেরপুর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই তাওহিদুল ইসলাম।

আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারক শারমীন নাহার মামলাটি আমলে নিয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশকে সরাসরি এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, এএসপি সার্কেল আব্দুল জলিল, মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট সাঈদ মোমিন মজুমদার, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ হোসেন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৬) গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার আশরাফ হোসেন, একই ক্যাম্পের ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি ৩২ ব্যাটালিয়নের বুড়িপোতা ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আসাদ মিয়া, মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম, তদন্ত অফিসার তরিকুল ইসলাম, সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হান্নান, ডিবির কনস্টেবল সাধন কুমার, কনস্টেবল নারদ কুমার, কনস্টেবল জিল্লুর রহমান, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন ও আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক মেম্বার দরদ আলী।

মামলার এজাহারে জানা গেছে, ১ থেকে ১৫ নম্বর আসামিরা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ( র‌্যাব), বিজিবি ও প্রশাসনে কর্মরত ব্যক্তি। ১৬- থেকে ১৯ নম্বর আসামিরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা ও ক্যাডার।

১ থেকে ১৫ আসামি তৎকালীন সময়ে সরকারের পুলিশ বিভাগে কর্মকর্তা/কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থাকলেও ১৬ থেকে ১৯ নম্বর আসামির আজ্ঞাবহ হিসেবে পরিচালিত হতো।
মামলার এজাহারে আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালে তারিক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলার সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন।

পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা থাকায় ভিন্ন মতের নেতৃত্বকে সমূলে বিনাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।

২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে তারিক মো. সাইফুল ইসলাম মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার ইসলামি ব্যাংকের কাছে গেলে আসামি বারিকুল ইসলাম লিজন ও দরুদ আলী সঙ্গে সঙ্গে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রসুলকে জানান। পরে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সুপারিশে তৎকালীন পুলিশ সুপার কে এম নাহিদুল ইসলামের নির্দেশে মামলার অন্যান্য আসামিরা তারিককে আটক করে। তাৎক্ষণিক সাংবাদিকরা জানতে পেরে তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে, নিহত তারিকের স্ত্রী তার স্বামীর সন্ধানে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে পুলিশ সুপার আটকের বিষয়ে অস্বীকার করেন। আটকের পর গোপন স্থানে রেখে তারিককে নিষ্ঠুরভাবে শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন করে আসামিরা। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরতলি বামনপাড়া শ্মশান ঘাট এলাকায় কথিত বন্ধুকযুদ্ধের নামে একাধিক গুলি করে হত্যা করে। পরদিন সকালে মেহেরপুর মর্গে থেকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবারের কাছে দেয়নি এই আসামিরা। শুধু কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি নিহত তারিকের নামে বিস্ফোরক, নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ৯টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এছাড়াও তারেকের পরিবারকে মামলা না করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়।

নিহত তারেকের লাশ দ্রুত দাফনের নির্দেশ দেয় আসামিরা।

মামলার বাদী তাওহিদুল ইসলাম জানান, আমার ভাইকে হত্যার পর আমাদের পরিবারকে সব সময় হুমকির মধ্যে রেখেছিল আসামিরা। চলতি বছরের ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ন্যায় বিচারের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছি। আশা করছি আমরা এই নির্মম হত্যা মামলাটির বিচার পাবো।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, তরুণ নেতা, তারিকের নামে কোনো মামলা ছিল না। শুধু বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতার প্ররোচনায় তারিকের মতো একজন তরুণ নেতাকে মামলা ছাড়াই আটক করে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। এর আগেও এই মামলাটি দায়ের করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় মামলাটি দায়ের করা সম্ভব হয়নি। এখন পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এই আলোচিত মামলাটি করা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে মামলাটি সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

এদিকে মামলা প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খান বলেন, তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামসহ মামলার অন্যান্য আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জামায়াতের ৬ জন নেতাকর্মীকে ক্রস ফায়ারের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তার করেছে জামায়াতের কয়েকশ নেতাকর্মীকে। আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমরা এইসব কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করছি। আশা করি আদালত ন্যায় বিচার করবেন।

Total Page Visits: 945 - Today Page Visits: 2