রাজবাড়ীতে বছরের শুরুতেই কৃষকের চাষে এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার কারণেই হতাশ জেলার কৃষকরা। একসাথে টমেটো বাজারে দাম ও অসময়ের বৃষ্টিতে পানিতে ক্ষেতে টমেটোতে পচন এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ি করছে এ জেলার চাষীরা।
এ জেলায় চলতি বছরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও অসময়ের বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষেতে টমেটোর গায়ে বিভিন্ন রকমের কালচে ও কালো কালো দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে।
এই পচন রোধ করতে পুনরায় ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে জেলার চাষিদেরা।এতে করে কৃষকদের খরচও বেড়ে গেছে।বাজারের দাম পড়ে যাওয়া এবং পচন রোগের কারণে কৃষকের মুখের হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।তবে কৃষি বিভাগ বলছে পচন রোগ ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের রোগ রোধে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলের উড়াকান্দা,নয়নসুখ,অন্তরমোড়, গোপালবাড়ী এলাকায় প্রায় ৩ শত বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের টমেটো।ঐ সব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাঠকে মাঠ টমেটো ক্ষেত। ঐসব ক্ষেতে থোকায় থোকায় ধরেছে টমেটো।পাকা টমেটো তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে এই ইউনিয়নের বেকার অসহায় নারী-পুরুষ।গাছ থেকে টমেটো ছিড়ে তা গাদি করে বস্তায় ভরে ট্রেরে করে সাজিয়ে টমেটোগুলো বিক্রির জন্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাট-বাজারেে বিক্রির জন্য ছোট পিকআপে করে পাইকারী বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে।
উড়াকান্দা এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষাবাদ করতে হলে শুরুতেই চাষসহ সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ বপন, লাগানো ও শ্রমিকের মুজরিসহ ৩০থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে থাকি। আবার লীজের জমি হলে খরচ বেড়ে গিয়ে দিগুণের বেশি লাগে। এবং ভালো ফলন হলে বিঘায় ১শত ৭০মন থেকে ২শত ২০ মণ টমেটো পাওয়া যায়। তবে এবছর বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছি আমরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৬ টাকা দরে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষককেরা।
কৃষক কুদ্দুস আলী সরদার,সুরুজ মন্ডল, আজিজ প্রমানিক সহ একাধিক কৃষক জানান,একসাথে সব টমেটো বাজারে ওঠায় কারনে টমেটোর দাম একেবারে কমে গেছে। এছাড়াও অসময়ের বৃষ্টির কারণে টমেটোতে পচন ধরায় টমেটো গুলো ক্ষেতেই পচন ধরছে এতে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি টমেটো বিক্রি করতে না পারায়। দেখা যাচ্ছে কষ্ট করে জমিতে ফসল ফলাতে গিয়ে আমাদের উৎপাদন খরচটাই এবার না উঠার সম্ভবনা বেশী।
অন্তরমোড় এলাকার কৃষক ইদ্রিস মিয়া জানান, টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছেন। বাজারদর না কমলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা তাদের।
রাজবাড়ী পাইকারি বাজারের আড়তদার মুক্তার হোসেন বলেন, চলতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। একসাথে সব টমেটো বাজারে ওঠায় কারনে দাম তুলনামূলক কিছুটা কম।তারপরও এই দামে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম. শহীদ নূর আকবর জানান, রাজবাড়ীতে এ বছর জেলায় ৭ শত ২২ হেক্টর জমিতে টমোটোর কৃষক চাষাবাদ করেছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম চাষ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলাতে। এ বছর রাজবাড়ী সদরে ২শত ৪৬ হেক্টর, গোয়ালন্দে ৩৫৭ হেক্টর,পাংশায় ৭৫ হেক্টর কালুখালীতে ৩৫ হেক্টর বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষাবাদ হয়েছে। রাজবাড়ীতে বিউটি ফুল, বিপুল প্লস, বিগল ও মিন্টু সুপার এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষাবাদ করছে কৃষককেরা। ,এ বছর জেলায় টমেটো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও অসময়ের বৃষ্টি উপেক্ষা করে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে টমেটোতে পচন দেখা দেওয়ার কারণে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। টমেটোতে পচন রোধ করতে আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে আমাদের পরামর্শ সঠিকভাবে যন্ত নিতে পারলে কিছুটা হলেও পচন কমে যাবে বাজারে বিক্রি করতে পারবে।