মেহেরপুর প্রতিনিধি \ খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়া আর অর্থকরী ফসল পাট পচনের পানির অভাবে ধান, পাট, আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে অনেকেই সবজি চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আবাদি জমি ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় আবাদ করছেন মৌসুমী সবজি। সবজি চাষ করে নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি অফিস বলছে এবছরে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাধাকপির চাষ হবে বলে আশা করছে। সবজি চাষ করে অভাব দূর হচ্ছে মেহেরপুরের কৃষকদের। এক সময় তাদের সংসার চলতো ধার-দেনা করে। কিন্তু সবজি চাষের ফলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে চাষিরা অভাব মোচনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন জেলার কৃষকরা। অল্পসময়ে ফসলের বাম্পার ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব ফিরে এসেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেহেরপুরের সাহারবাটি, গাড়াডোব, আমঝুপি, রাজনগর, যুহিন্দা, আশরাফপুর, সোনাপুর, পিরোজপুর, আমদাহ, মোনাখালিসহ প্রতিটি গ্রামে বাঁধাকপিসহ সবজি চাষ হচ্ছে। শীতকালেই বাঁধাকপি ভালো জন্মে থাকে। শীত মৌসুমে আগাম ও নাবী দুইভাবেই চাষ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও বাঁধাকপি চাষ করা হয়। মৌসুমি ভেদে বাঁধাকপির বীজ বপনের সময়ে বাঁধাকপি রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি । এটি অন্যতম পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ‘ । সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গ্রীষ্মকালেও চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি। অসময়ের ফসল হওয়ার কারণে বাজার মূল্য বেশি।
সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের কৃষক মিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমি বাধাকপির চাষ করি । এবার আগাম ট্রপকিসান জাতের গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি । এখন পর্যন্ত ক্ষেতে ভালো বাঁধাকপি দেখা যাচ্ছে। আগাম চাষে প্রচুর খরচ হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বীজের দাম খুব বেশী তাই আগাম সবজি চাষে অনেক খরচ হয়। এসব সবজি বাজারে নেবার আগে যদি অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং কোনো ভাইরাস না লাগে তাহলে বাজারমূল্য ভালো পাওয়া যাবে। ১ লক্ষ টাকার বেশী বেচাকেনা হতে পারে। এই বাঁধাকপি সংগ্রহরে পর আবার শীতকালীন সবজি চাষ করা যাবে।
সদর উপজেলার সবজি চাষি রাকিবুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর সবজি বিক্রি করে ভাল লাভ পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে আবার ক্ষেতে আগাম বাধাকপি এবং ফুলকপির চাষ করেছি। আগাম সবজি চাষে খরচের তুলনায় দিগুন লাভ হয়। কিন্তু ভরা মৌসুমে সবজির দাম পড়ে যায়। এ রকম যদি হয় তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।
আমদাহ ইউনিয়নের ওয়াজেদ আলী বলেন, দেড় বিঘা জমিতে বাধাকপির আবাদ করেছি। আমরা গ্রামের চাষীরা সময় মত ন্যায্য মূল্যে সার-কীটনাশক সরকার থেকে পাই না যার করনে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় সবাজ চাষে। আগাম সবজি চাষে খরচ হলেও লাভ বেশী হয়।
সদর উপজেলা যুগিন্দা গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, গত বছর আমি জমিতে ইরির আবাদ শেষে সবজির আবাদ করেছিলাম। এতে আমি প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এবারও ২ বিঘা জমিতে বাধাকপির চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি গত বছরের তুলনাই এবারও লাভবান হবো।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা জানান, গত বছর মৌসুমে উপজেলায় ৪০ হেক্টরে ফুলকপি ও ৬০ হেক্টরে বাঁধাকপি চাষ হয়েছিল। এ বছরের লক্ষমাত্রা গত বছরের তুলনায় অতিক্রম করবে প্রায় ৭০ হেক্টরে বাঁধাকপি চাষ হওয়ার আশা আছে । তিনি আরও বলেন, জুলাই মাস থেকে আগস্ট সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত আগাম বাধাকপির চাষ হবে। সঠিক পরিচর্যায় প্রতি হেক্টরে ২৫/৩০ টন ফুলকপি ও বাঁধাকপি উৎপাদন করা সম্ভব। ফুলকপি বড় হচ্ছে। অনেক কৃষক স্থানীয় বাজার সহ জেলার বাহিবে বরিশাল, পুটুয়াখালি, খুলনা, চট্্রগ্রাম, ঢাকা পর্যায়ের বাজার গুলোতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছে। সব খরচ বাদ দিয়ে কৃষক লাভের মুখ দেখবে। যার জন্যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব ফিরে আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, মেহেরপুরের মাটি অতান্ত ভালো এবং উর্বর। এ জেলায় প্রায় বারোমাস বিভিন্ন সবজির চাষ করে থাকে চাষীরা। অনুকুল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সহজ লভ্যতা ও কৃষি বিভাগের সুষ্ঠ মনিটরিং এর কারনে বিগত কয়েক বছরে তুলনায় এ অঞ্চলে শাক সবজির আবাদ ভাল হচ্ছে। ভাল দামের কারণে কৃষকরা প্রচুর লাভ পাচ্ছেন। এর ফলে শাক-সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। এবছরে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাধাকপির চাষ হবে আশার রাখছি।
মেহেরপুরে আগাম বাধাকপি চাষে কৃষেকের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
Total Page Visits: 1028 - Today Page Visits: 2