মেহেরপুর জেলার গাংনীতে প্রকাশ্যেই কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে অপুষ্ট টমেটো। ক্ষেত থেকে তোলা অপুষ্ট টমোটো কেমিক্যালের গুণে হয়ে যাচ্ছে লাল টুকটুকে। এতে আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামে কিনছেন ক্রেতারা। হাটবাজারে যত্রযত্র এগুলো বিক্রি হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
কেমিক্যাল মেশানো টমেটো খেয়ে ভোক্তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলায় চলতি মৌসূমে ৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়। সবজির মধ্যে টমেটোর প্রতি এক আলাদা আগ্রহ রয়েছে মানুষের। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিশেষ করে যোগ হচ্ছে টমেটোর সালাদ। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও চাষি। টমেটো পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে। আর কেমিক্যাল দিয়ে গায়ে রং তৈরি করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে পাকা টমেটোর মতই। রোদের মধ্যে টমেটো রেখে নির্দিষ্ট কেমিক্যাল স্প্রে করা হচ্ছে প্রতিদিন। তারপর খড়কুটা দিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ জাগ রাখার পর রং আসে এবং তারপরই বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতে টমেটো জাগে দেয়ার আগে বিষাক্ত নয়, সামান্য পরিমাণ কেমিক্যাল দেয়া হচ্ছে। বেশি একটি ক্ষতিকর নয়। আর চাষিরা বলছে, বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকায় ব্যবসায়িরা টমেটো কিনে জাগ দিয়ে পাকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছেন।
টমেটো কিনতে আসা বামন্দি বাজারের তানভির জানান, অনেকেই টমেটোর রং দেখে পাকা মনে করে কিনে নিচ্ছেন কেমিক্যাল মেশানো টমেটো। সব জায়গাতেই একই অবস্থা। তাই সচেতন ক্রেতারা কাঁচা টমেটো কিনতে আগ্রহী। সচেতন ক্রেতারা এগুলো এড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগ মানুষ এগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। ক্রেতাদের চাহিদার কারণে খুচরা বিক্রেতারও বিক্রি করছেন কেমিক্যাল মেশানো টমেটো। আবার সচেতন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ীও কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম শাহাবুদ্দীন বলেন গাংনী উপজেলায় বেশ কয়েকটি জাতের টমেটো উৎপাদিত হয়। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরণের টমেটো। কয়েকদিন যাবত টমেটোয় কেমিক্যাল স্প্রে করা ও কেমিক্যাল দিয়ে টমেটো পাকানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক আবু তাহের সিদ্দিক জানান, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এ সবজি খেয়ে সাময়িক নানা অসুবিধার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিও হতে পারে। এখনই এর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মেহেরপুর শাখার সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, এই অসাধু পন্থায় প্রতারিত করা হচ্ছে ক্রেতাদের। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন এর বিরুদ্ধে ফলদায়ক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
সুস্বাদু এই জনপ্রিয় সবজি টমেটোতে কেমিক্যাল স্প্রে করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ক্ষতিকর। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম।