softdeft

চাকরি পেয়েছেন দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া আলমগীর

চাকরি পেয়েছেন দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া আলমগীর

‘এখন একটি টিউশনি করে দেড় হাজার টাকা পাই। এটা দিয়ে আমার খাওয়া খরচ হবে। কিন্তু ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলে টাকা লাগে। একবার ঢাকায় গেলে সারামাসে আমি খাব কী? কিন্তু টিউশনির বিনিময়ে দুই বা তিনবেলা ভাতের ব্যবস্থা হলে আমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যেতে পারব। এমন চিন্তা থেকে ওই সময় বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলাম’।

দেশের অন্যতম রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’তে চাকরি পেয়েছেন ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া বহুল আলোচিত যুবক আলমগীর কবির।

বগুড়া জেলার পুলিশের এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর প্রচেষ্টায় শপিংমল পুলিশ প্লাজা বগুড়া ব্রাঞ্চে ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট’ পদে তাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আলমগীরের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বপ্ন পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুল।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আলমগীর কবির বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান।

সেখানে প্রায় ২ঘণ্টা ধরে আলমগীরের সঙ্গে আলাপ করেন এসপি। এ সময় তার কাছে থেকে বিস্তারিত কথাবার্তা শোনেন পুলিশ সুপার।

তিনি জানান, ‘আলমগীরের ওই বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করার জন্য তার সাক্ষাতকার নিই। কথা বলে মনে হয়েছে, তার চাকরি আসলেই প্রয়োজন আছে। আবার এটাও ঠিক ওই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হীন-মানসিকতার পরিচয়। সে কথা তাকে বলেছি।’

আর্থিক অনটনের কারণে আলমগীর কবিরের তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছিল না। সে কারণে উপায় না দেখে সম্প্রতি তিনি আশ্রয় নেন ‘বিজ্ঞাপনের’। দেয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপনে তিনি জানান, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’।

দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো সেই বিজ্ঞাপনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। এরপর থেকে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় পোস্টটি।

পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে আলমগীর কবির নিজেই বিব্রত অবস্থায় পড়েন। তিনি জানান, ফেসবুকে ওই পোস্ট তিনি করেননি। কেউ একজন করেছেন।

বিজ্ঞাপনের ওই বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার জেলা পুলিশ তার খোঁজ করে। পুলিশ জানায়, মূলত তার মানবিক দিক বিবেচনায় আলমগীরের খোঁজ করা হয়।

৩২ বছর বয়সী আলমগীর কবির বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন।

আলমগীর জানান, পল্লী চিকিৎসক মো. কফিল উদ্দিন ও মা আম্বিয়া বেগমের ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় সন্তান রুহুল আমিন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। কবিরের বড় ৩ বোন রুপালী, নূরজাহান ও সুরাইয়া।

পরিবারটির অল্পকিছু জমি আছে। এতে তাদের সারা বছরের ভাতের চাহিদা মিটে যায়।

নিজেকে না খেয়ে থাকার মতো অভাবী নন বলে উল্লেখ করেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন একটি টিউশনি করে দেড় হাজার টাকা পাই। এটা দিয়ে আমার খাওয়া খরচ হবে। কিন্তু ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলে টাকা লাগে। একবার ঢাকায় গেলে সারামাসে আমি খাব কী? কিন্তু টিউশনির বিনিময়ে দুই বা তিনবেলা ভাতের ব্যবস্থা হলে আমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যেতে পারব। এমন চিন্তা থেকে ওই সময় বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলাম’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিভিন্ন ছবি ও স্ক্রিনশট ছড়ানোর বিষয়ে আলমগীর জানান, ‘আমি শুধু মজা করে কিছু ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলাম। আমার এসব ছবি মানুষ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে। ওই বিজ্ঞাপন দেয়ার কারণেও অনেকেই আমাকে নিয়ে কটূক্তি করছেন। অথচ আমি দেশ বা সরকারকে কোনোভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এসব করিনি’।

Total Page Visits: 714 - Today Page Visits: 4