নোয়াখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় স্কুলছাত্রী তাসনিয়া হোসেন অদিতা (১৪) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুর রহিম রনি (২৫) নামের তার সাবেক এক কোচিং শিক্ষকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক আলামতে রনির শরীর থেকে ভিকটিম কর্তৃক নখের কিছু আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন, জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। গ্রেপ্তারকৃত রনি লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার খলিল মিয়ার ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, নিহত শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরপর পুলিশের একাধিক দল পৃথক অভিযান চালিয়ে ইসরাফিল (১৪), তার ভাই সাঈদ (২০), আবদুর রহিম রনি (২০) ও ইমাম হোসেনকে (৩৯) আটক করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে প্রাথমিকভাবে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে, রনির মাথা, ঘাড়, গলাসহ শরীরের একাধিক স্থানে নখের আঁচড় রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় রনি ও ইসরাফিল আলমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অপর আটক সাঈদ ও ইমাম হোসেনকে ১৫৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রনির কোচিং থেকে কিছুদিন আগে পড়া বন্ধ করে দিয়ে অন্যস্থানে প্রাইভেট শুরু করে অদিতা। এতে ক্ষিপ্ত হয় রনি, যদিও পরে অদিতাদের বাসায় বিভিন্ন সময় আসা যাওয়া করতো সে। অদিতার মা ঘরে না থাকার সুযোগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে ২টার মধ্যে কোন একসময় বাসায় গিয়ে অদিতাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ ও পরে ঘটনা দামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘরে থাকা ছোরা দিয়ে হাত ও গলা কেটে অদিতাকে হত্যা করে এবং ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ঘরে আলমেরিতে থাকা মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। ধর্ষণের সময় অদিতার চিৎকারের শব্দ যেন ঘরের বাইরে যেন না যায় সে জন্য সে ঘরের ফ্যান, পুরো সাউন্ড দিয়ে টিভি ও পানি ট্যাব ছেড়ে দিয়ে রাখে।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় অদিতার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্াতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ডিএনএ’সহ সকল পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসার পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে, অদিতা হত্যার ঘটনায় শুক্রবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের মুজিব চত্ত্বরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। সচেতন নোয়াখালীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র/ছাত্রী ও স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা, শিক্ষার্থী তাসনিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে সর্বচ্চো শাস্তির দাবি করেন। একইসাথে কিশোর গ্যাংসহ শিক্ষার্থীদের উত্তক্ত্যকারী সকল বখাটে ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহান মঞ্জিলের একটি কক্ষ থেকে অদিতার মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। সে নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মৃতদেহটি অর্ধনগ্ন, গলা ও দুই হাতের রগ কাটা অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিলো। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।