কোনো সাংবাদিক তার তথ্যের সোর্স (উৎস) কারও কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাই কোর্ট। হাই কোর্ট বলেছেন, সাংবাদিকদের সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশনে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্র বনাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গত ২১ জুন এ রায় দেন। গতকাল এ রায়ের ৫১ পৃষ্ঠা পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় আমাদের মতামত হলো, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন। এ মামলার শুনানি পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান যে, কোনো সাংবাদিক তার নিউজের তথ্যের সোর্স কারও কাছে প্রকাশ করতে বাধ্য নন। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেওয়া আছে।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রায়ে হাই কোর্ট আরও বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আধুনিক বিশ্বে জানার অধিকার সবারই আছে।
গণমাধ্যমের কাজ হলো জগণকে সজাগ করা। বর্তমান সময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে। আর এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে হলুদ সাংবাদিকতা গ্রহণযোগ্য ও সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমের মনোযোগী হওয়া উচিত। জনস্বার্থে সাংবাদিকরা দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ অনিয়মের বিরুদ্ধে।
সংবাদ প্রকাশে আইন তাদের সুরক্ষা দিয়েছে।
গত ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাই কোর্টে আবেদন করে দুদক। একপর্যায়ে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির পাশাপাশি প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই রুল নিষ্পত্তি করে গত ২১ জুন রায় দেন হাই কোর্ট।