মেহেরপুরে ধীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ৯টি ইট ভাটায় ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আয়ান ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটার আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান আদালত।
মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিফুর রহমান জানান-মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাতে অভিযান পরিচালনাকালে ভাটাগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, অবাধে কাঠ পোড়ানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকট স্থানে এবং ফসলী জমি ধ্বংস করে ইটভাটা তৈরি করার অপরাধে মুজিবনগর উপজেলার নয়টি ইটভাটার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থিত আয়ান বিক্সকের আংশিক উচ্ছেদ করে ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান- এই অভিযান পর্যায়ক্রমে জেলার সব উপজেলায় চলবে। তিনি জানান-আদালত ইটভাটার মাটি পড়ে সরকারী রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকী বিষয়টিকে দন্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় অধিকাংশ ইটভাটা লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এবং ফসলী জমি ধ্বংস করে স্থাপন হওয়ার বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কুষ্টিয়া) আতাউর রহমান জানান- মেহেরপুর জেলায় ৯৩টি ইট ভাটার মধ্যে ১টি মাত্র ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। অবৈধ এই সমস্ত ইটভাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে তালিকা দিয়েও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিকের অভিযোগ- জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহলকে টাকা দিয়ে তারা এতদিন এভাবেই ভাটা পরিচালনা করে আসছিল। এ কারণে তারা এতদিন বৈধ কাগজপত্র ছাড়ায় বছরের পর বছর কাঠ পুড়িয়ে এবং ফসলী জমি ধ্বংস করে ইটভাটাগুলো চালাচ্ছিল। তাদের অভিযোগ- যারা এতদিন মাসোহারা নিয়ে কিছু হবে না বলে অভয় দিয়ে আসছিল, আজ তাদের কারণেই তাদের ইটভাটা ব্যবসা হুমকীর মুখে পড়লো। উল্লেখ্য, মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-১ম আদালতের বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ গত ৭ জানুয়ারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধ সহ ইট ভাটার মাটি পড়ে সরকারী রাস্তার ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি, সড়ক চলাচলকারীদের জন্য জীবনের হুমকী বিষয়টিকে দন্ডবিধির ২৯০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য করেছেন। সেই সাথে জেলায় ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ লাইসেন্স বিহীন, অবৈধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্টান ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়া বিষয়টি ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ এর ধারা ৪ ও ৮ এর লঙ্ঘন এবং উক্ত আইনের ধারা ১৪ ও ১৮ অনুযায়ী অর্থদন্ড ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে স্ব-প্রণোদিত আদেশ জারী করে ২৩ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল পূর্বক ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়াকে এবং উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে পিবিআইকে ইন্সপেক্টর পদমর্যদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্টু তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।