মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও আবু জেহেল নামের দুই ভাই হত্যা মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে আদালত। রবিবার (২এপ্রিল) দুপুরে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের কিয়ামতের ছেলে হালিম (৩৫), আছের উদ্দীনের ছেলে আতিয়ার (৪০), নজির আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (৪০), মৃত দবীর উদ্দীনের ছেলে শরিফ (৪০) ও ফরিদ (৪৫), আব্দুল জলিলের ছেলে জালাল উদ্দীন (৪৩), আফেল উদ্দীনের ছেলে আজিজুল (৩৬), মুনছারের ছেলে মনি (২৫), নজির উদ্দীনের ছেলে দবির উদ্দীন (৩২)। এর মধ্যে জালাল উদ্দীন পলাতক রয়েছে। বাকিরা রায় প্রদানের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। একই মামলায় আরিফ, রাজিব, আলমেস, হারুন ও ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকুসর খালাস প্রদান করেন।
মামলার বিবরনে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৫ জুন কাজীপুর গ্রামের একটি মাঠ থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেন্সিডিল উদ্ধার করে বিজিবি। রফিকুল ইসলাম ও আবু জেহেল দুই ভাইয়ের নামে বিজিবিকে ফেন্সিডিল ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ঐ দিন রাতে রফিকুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে মারধর করে অভিযুক্তরা। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে রফিকুলকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ১৫ জুন রাত ১০ টার দিকে বিষয়টি মিমাংসার জন্য ঐ দুই ভাইকে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তারপর থেকেই ঐ দুইজনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরদিন ভোর রাতে কাজীপুর গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত মেইন পিলার ১৪৫ এর সাব পিলারের ৬ এস এর পাশে ঐ দুই ভাইয়ের ক্ষত বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ঐ দুই ভাইয়ের বোন জরিনা বেগম গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পড়ে তৎকালীন গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের হাতে। ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ১৪ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন তিনি। এ মামলায় তিন জন আসামী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকাক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। ১৭ জনের সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আদালত এই মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি ছিলেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট কাজী শহীদুল হক ও আসামী পক্ষের আইনজীবি ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এ.কে.এম শফিকুল আলম, অ্যাডভোকেট আতাউল গনি আন্টু। এ মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট কাজী শহীদুল হক। তিনি বলেন, এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক রায়। এ রায় নজির হয়ে থাকবে। কারণ মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারক্তি মূলক জবানবন্দীও রয়েছে। অন্যদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম শফিকুল আলম বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চতর আদালতে আপিল করবো। এদিকে রায় ঘোষনার পর পরই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের স্বজনরা।