softdeft

মুজিবনগরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চুলের ক্যাপ তৈরির ব্যবহার হচ্ছে ভারতীয় করোনা রোগির চুল\ এলাকায় আতংক

মুজিবনগরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চুলের ক্যাপ তৈরির ব্যবহার হচ্ছে ভারতীয় করোনা রোগির চুল\ এলাকায় আতংক

ফোকাস মেহেরপুর । অনুমতি ছাড়া মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে পরচুলা (চুলের ক্যাপ) তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে অবাধে। কম মজুরীতে এসব কারখানায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ দিয়ে কাজ করছে ব্যবসায়ীরা। অল্প পঁজির এ ব্যবসায় এসব কারখানার মালিকরা লাভবান হলেও মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্য বিধি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- চোরাইপথে ভারত থেকে আসা করোনা আক্রান্ত রোগীর কেটে ফেলা চুল ব্যবহৃত হচ্ছে এসব কারখানা গুলোতে। এখনই এর কার্যক্রম বন্ধ না করলে এলাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাবে। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছে।
ভারতের করোনা রোগির কেটে ফেলা এসব চুল চোরা পথে আসা এবং এসব কারখানায় তা ব্যবহার হচ্ছে। এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ যে, কারখানার কারিগররা কোন প্রকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না ও করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে কোন প্রকার মাক্স ব্যবহার করছে না। ছোট্ট ঘরে একই সাথে অনেকগুলো মানুষ এক সাথে কাজ করছে। এতে স্বাস্থ্য বিধি বিঘিœত হচ্ছে। ওই সব কারখানার কারিগর সহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এখনই এসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

মুজিবনগর উপজেলার আ¤্রকানন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সোহরাব হোসেনের ভবরপাড়া, সোনাপুর ও নাজিরাকোনা গ্রামে ৪ টি, ভবরপাড়া গ্রামের মিঃ দিলিপ মল্লিকের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৬টি, আনন্দবাস গ্রামের মামুনের ভবরপাড়া ও সোনাপুর গ্রামে ২ টি, সোনাপুর গ্রামের আলতাব হোসেনের তার গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় একটি, সোনাপুর মাঝপাড়া গ্রামের তেঁতুলতলায় মিলনের একটি, সোনাপুর গ্রামের কলোনীপাড়ায় রাবেয়া খাতুনের ২টি ও সোনাপুর গ্রামের পশ্চিশপাড়ায় বাশারের একটি পরচুলা (চুলের ক্যাপ) তৈরির কারখানা আছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, এসব কারখানায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত কুতুবপুর ও মুন্সিপুর এবং মুজিবনগরের স্বাধীনতা সড়কের ওপারে হৃদয়পুর ও সোনাপুর মাঝপাড়া দিয়ে ভারত থেকে আসা চুল ব্যবহার করা হচ্ছে । গ্রামের মানুষ সবাই জানে কেউ কিছু বলেন না। বললে মারার ভয় দেখায়।
এদিকে উপজেলার গৌরীনগর খালপাড়ার লিয়াকত, মহিষনগর গ্রামের জালাল মিস্ত্রী, গৌরীনগর গ্রামের কিবরিয়া, ভবেরপাড়া গ্রামের জামান ও একই গ্রামের রাজ্জাকের বাড়ি সহ এলাকার প্রায় ১৫-২০ টি বাড়িতে পরিস্কার ও লম্বা চুল বাছাই করা হচ্ছে। স্কুলের ছোট ছেলে-মেয়েরা এসব চুল বাছাই ও পরিস্কার করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্য বিধির কোন বালাই নেই। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না এবং মাক্স পরে না। ছোট্ট একটা বেঞ্চে ৪-৫ জন বসে চুল বাছাই ও পরিস্কার করার কাজ করছে।
মুজিবনগর উপজেলা সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার কুতুবপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম, জাহাজপোতা গ্রামের আব্বাস এবং মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের সামাদ সহ এলাকার বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুজিবনগর এলাকায় চুল বিক্রি করেছেন। এসব অপরিস্কার ভারতীয় চুল ।

তবে উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কারখানার মালিক বাশার বলেন- ঢাকাতে আছে বায়ার। যাদের মাধ্যমে আমরা পরচুলা (চুলের ক্যাপ) তৈরির কাজ পাই। তারা চীন থেকে আমদানীরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জীবানুমুক্ত চুল বিভিন্ন কুরিয়ার ও পরিবহনের মাধ্যমে আমাদের কারখানায় পৌঁছে দেয়। আমাদের এসব কারখানাগুলোতে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, বেকার যুবক-যুবতীরা ওই চুল দিয়ে চীনের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের পরচুলা (চুলের ক্যাপ) তৈরি করে। পরে ওইগুলো আমরা ঢাকার বায়ারের কাছে পৌঁছে দেয়।
ভবরপাড়ার মালিক মিঃ দিলিপ মল্লিক বলেন- আমরা কখনই ভারত থেকে আসা চুল আমাদের কারখানায় ব্যবহার করিনা। হতে পারে আমাদের কারখানায় ব্যবহৃত চুল বাংলাদেশ, ভারত কিংবা চীনে যায় আমরা বায়ারের মাধ্যমে জানতে পারি। আমাদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিকরা বায়ারদের অর্ডার মোতাবেক কাজ করে তাদের হাতে পেঁছে দেয়। এতে আমরা কাজ অনুযায়ী ৫শ’ হতে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকি।
মুজিবনগরের বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ূব হোসেন বলেন- ব্যবসার আগে স্বাস্থ্য। আমরা চাইনা করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারন করুক। আমি আমার ইউনিয়নে অতিসত্বর মাইকিং করে এ ব্যবসা বন্দের আদেশ দেব এবং এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার বলেন- আমরা মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নিয়মিত প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি, মা´ বিতরণ করছি, ভ্রাম্যমান আদালত বসাচ্ছি। আমরা প্রয়োজনে অভিযান চালিয়ে চুলের এ ব্যবসা বন্ধ করে দেব।

Total Page Visits: 1034 - Today Page Visits: 3