মেহেরপুরে বজ্রাঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার্থে এক হাজার তালের বীজ রোপণ করেছে টি এইচ এফ নামক একটি নাট্য সংগঠন। গতকাল ২৩ অক্টোবর রোজ শুক্রবার মেহেরপুর সদর উপজেলা বুড়িপোতা ইউনিয়নের গভিপুর গ্রামে ভৌরর নদীর দুই পাশে সকাল ৯ টার সময় তাল বীজ রোপণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয় । তালবীজ রোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ্ জামান এসময় উপস্থিত ছিলেন টিএইচএফ’র প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল হাসান, ‘টিএইচএফর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানজীমুল ইসলাম , ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শামীম হাসান খাঁন খোকন, তালবীজ রোপণ কর্মসূচীর আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বাবু, মোঃ হাসান, স্বপণ দত্ত, খসরু, মাহফুজ, লাবিব, নিজাম উদ্দিন, আব্দুস শুকুর, আশিক, আকাশ, মাহি, জ্যাতি, শিহাব, নাফিউল, ইমতিয়াজ প্রমুখ।
বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ্ জামান বলেন বজ্রপাত হলো বাংলাদেশের সবচাইতে বড় প্রাণঘাতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রচুর লোকের প্রাণ হানি ঘটে থাকে। বজ্রপাত থেকে বাঁচার চিরস্থায়ী কোন উপায় এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি। তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা উচিৎ নয়। আর হাত পা গুটিয়ে না বসার জন্যই তাল গাছ রোপণের এই কর্মসূচী। আজ “টিএইচএফ” সরকারের এই মহতী কর্মসূচীটি বাস্তবায়ন করছেন তারা যেন পরবর্তী পরিচর্যার দায়িত্বটুকুও সঠিকভাবে পালন করেন । তালের বীজ রোপণের এই কর্মসূচীটিকে ব্যাপকভাবে সামাজিকিকরণ করতে হবে। যে এলাকায় বীজ রোপণ করা হয়েছে সেই এলাকার মানুষকেই একে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদেই। আমি তাল বীজ রোপণের এই মহতি কর্মসূচীর সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।
‘টিএইচএফ’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানজীমুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অনন্য ভূমিকা পালন করে তালগাছ। ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড়, ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে পরিবেশ উন্নয়নে তালগাছের ভূমিকা অনন্য। তালগাছের আঁশ দিয়ে কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরি করা হয়,তালগাছ জ্বালানি, নতুন রাস্তার ল্যান্ডস্কেপ, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর সফল প্রয়োগ রয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনে তালগাছ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে এই কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী পরম বন্ধু তালগাছ। প্রতিনিয়ত নানান কাজে ব্যবহারের জন্য নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে তালগাছ কিন্তু নতুন করে গাছ লাগানোর সঠিক উদ্যোগ সেই ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। পরিবেশের রক্ষার্থে সরকারের নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বছরের ন্যায় এই বছরো আমরা ১ হাজার তাল বীজ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাই অন্তত একটি তালবীজ রোপণ করা। আমারা একটু উদ্যোগ নিলেই বদলে যাবে আমাদের চিরপরিচিত পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
টিএইচএফ’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শামীম হাসান খাঁন খোকন বলেন, তাল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বজ্রাঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। দেশে প্রতি বছর গড়ে এর সংখ্যা ২৫০ এর বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন। যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে এটিকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করছে সরকার। তাল গাছ অনেক উপকারী গাছ তবে ইদানিং তাল গাছের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এমন উপকারী একটি গাছের বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে, আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আপনারাও আপনাদের বাসায় পড়ে থাকা তালের বীজ বাড়ির আঙিনা কিংবা আশেপাশে রোপণ করুন। আসুন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ও বজ্রাঘাত থেকে বাঁচতে তালের বীজ রোপণ করি।