softdeft

মেহেরপুরের রাজবংশ

মেহেরপুরের রাজবংশ

অফিস প্রধান । বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৬৫ সালে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করলে নদীয়া তাদের শাসনাধীনে চলে আসে। নদীয়া প্রাচীন কাল থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষ খ্যাত ছিলো। বারোশ শতকের শেষাংশ থেকে বাংলার শেষ স্বাধীন হিন্দু নরপতি লক্ষন সেনের রাজধানী ছিলো নদীয়া। ১২০১ সালে [মতান্তরে ১২০৩] ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজী নামক একজন মুসলিম সেনাপতি মাত্র আঠারো জন অশ্বারহী সৈন্য নিয়ে লক্ষন সেনের রাজধানী নদীয়া দখল করে বাংলায় সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনের সূত্রপাত করেন।
মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মেহেরপুরের বাগোয়ানের ভবানন্দ মজুমদার [বাল্যনাম দুর্গাদাশ সমাদার] যে রাজবংশ নিয়ে জমিদারি কায়েম করেন তা নদীয়া নামে পরিচিত হয়।
মোঘল আমলে বাগোয়ান প্রসিদ্ধ পরগণা ছিলো। ডক্টর ইরফান হাবিবের,’ An Atlas Of Mughal Empire- Political and Economic Maps with detailed notes, bibliography and index গ্রন্থে বাগোয়ান সম্পর্কিত তথ্য আছে।
নদীয়ার রাজবংশের ইতিহাস :—-বাংলা বিজয়ে মানসিংহকে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার স্বরুপ ভবানন্দ মজুমদার সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সন্মান লাভ করেন এবং তার সাথে এক ফরমান দ্বারা নদীয়া, সুলতানপুর, মারুপদহ,মহৎপুর,লেপা,কাশিমপুর, কয়েশা মমুন্দ্রা প্রভৃতি চৌদ্দটি পরগনার অধিকার লাভ করেন ( ১৬০৬ খ্রি : )। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রদত্ত ১৪ টি পরগনার সনদসূত্রে নদীয়ার রাজা হন ভবানন্দ মজুমদার এবং সেই সঙ্গেই নদীয়া রাজবংশের সূচনা করেন। তাঁর বংশধররা ‘রাজা’ উপাধি ধারণ করে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠাকাল পর্যন্ত নদীয়া শাসন করেন | ভবানন্দের পূর্ব নাম ছিল দূর্গাদাস সমাদ্দার, কিন্তু নদীয়া রাজপদে আসীন কালে তার নাম হয় ভবানন্দ মজুমদার।
ভবানন্দের পূর্বপুরুষের পরিচয় :–
নদীয়ার রাজাগণ আদিশূর আনীত পঞ্চব্রাহ্মণের অন্যতম নেতা ভট্টনারায়ণের বংশজ। ভট্টনারায়ণ কান্যকুব্জ প্রদেশের ক্ষিতীশ নামে এক রাজার পুত্র ছিলেন। ভট্টনারায়ণের পুত্র নিপু হইতে অধঃস্তন একাদশ পুরুষে কামদেব জন্মগ্রহণ করেন। এই কামদেবের চার পুত্র ছিল তার মধ্যে জেষ্ঠ্য বিশ্বনাথ পিতার পিতৃগদী প্রাপ্ত হয়ে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লী যাত্রা করেন এবং স্বকীয় অসাধারণ বিদ্বাবত্ত্বাগুণে দিল্লির দরবার হতে রাজ উপাধি এবং পৈত্রিক সম্পত্তি ব্যতীত আরও অনেক গুলি গ্রামের অধিকার পান। বিশ্বনাথের পরে উল্লেখযোগ্য রাজা হন কাশীনাথ। ইনি অসাধারণ বীর এবং বুদ্ধিমান হলেও শেষপর্যন্ত এক ঘাতকদের হাতে প্রাণদান করেন। এই সময় তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী বাগোয়ান পরগনার জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্বারের বাড়িতে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন। সেখানে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এই পুত্রের নাম রামচন্দ্র | অন্যদিকে জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্বার ছিলেন নিঃসন্তান , তাই মৃত্যুকালে তিনি রামচন্দ্রকেই তাঁর ক্ষুদ্র জমিদারীর অধিকারী করে যান। আর এই রামচন্দ্রের দূর্গাদাস, জগদীশ, হরিবল্লভ এবং সুবুদ্ধি নামে চারটি পুত্র ছিল।
এই দূর্গাদাসই পরে ” মহারাজা ভবানন্দ মজুমদার ” নামে অভিহিত হন | জানা যায়, বঙ্গের শেষ স্বাধীন বাঙ্গালী রাজা প্রতাপের রাজধানীতে প্রবেশের গুপ্ত পথ দেখিয়ে এবং প্রয়োজনীয় রসদ দিয়ে তিনি দিল্লির শাসক জাহাঙ্গীর এর সেনাপতি মানসিংহকে সাহায্য করেছিলেন। তাই জাহাঙ্গীর তাঁর এই কাজে খুশি হয়ে ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে ভবানন্দকে ১৪ টি পরগনা সনদসূত্রে দেন। এছাড়াও ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাংলার নবাব ইসমাইল খাঁ ভবানন্দের বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁকে কানুনগুই পদে নিযুক্ত করেন। এমনকি দিল্লীর সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তাঁর জন্য সনন্দ ও মজুমদার উপাধিও এনে দেন।
ভবানন্দ নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাটিয়ারিতে নদীয়ারাজের রাজধানী স্থাপন করেন। পরবর্তীতে নদীয়ারাজ রুদ্র রায় তাঁর তৎকালীন নদীয়া রাজ্যের মধ্যবর্তী স্থানে নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের নিকট জনপদ ‘ ‘রেউই ‘ গ্রামে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং রেউই এর নামকরণ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামানুসারে ‘ কৃষ্ণনগর’।
সূত্র – নদীয়া কাহিনি-কুমুদনাথ মল্লিক,
ক্ষিতীশ বংশাবলী চরিতং
কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস
উইকিপিডিয়া
ছবি সংগ্রহ গুগল থেকে
লেখক-শহিদুল ইসলাম
Total Page Visits: 919 - Today Page Visits: 4